Thursday, September 21, 2017

লালবাগের কেল্লা ,লালবাগ,ঢাকা

লালবাগের কেল্লা (কেল্লা আওরঙ্গবাদ নামে পরিচিত ছিল), বাংলাদেশের ঢাকার, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ১৭ শ শতকে নির্মিত একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ স্থাপনা।[৬] এটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল ১৬৭৮ সালে, মুঘল সুবাদার মুহাম্মদ আজম শাহ কতৃক, যিনি ছিলেন সম্রাট আওরঙগজেবের পুত্র এবং পরবর্তীতে নিজেও সম্রাট পদপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। তার উত্তরসুরী, মুঘল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন, কিন্তু শেষ করেননি।

সম্রাট আওরঙ্গজেবের ৩য় পুত্র , মুঘল রাজপুত্র আজম শাহ বাংলার সুবাদার থাকাকালীন ১৬৭৮ সালে এটার নির্মাণকাজ শুরু করেন । তিনি বাংলায় ১৫ মাস ছিলেন। দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য পিতা সম্রাট আওরঙগজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান । এসময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়।নবাব শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে পুনরায় বাংলার সুবাদার হিসেবে ঢাকায় এসে দুর্গের নির্মাণকাজ পুনরায় শুরু করেন।১৬৮৪ সালে এখানে শায়েস্তা খাঁর কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানুর(পরী বিবি) মৃত্যু ঘটে ।কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর শায়েস্তা খান এ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেন এবং ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে অসমাপ্ত অবস্থায় এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন।[৭] লালবাগের কেল্লার তিনটি প্রধান স্থাপনার একটি হল পরী বিবির সমাধি ।শায়েস্তা খাঁর ঢাকা ত্যাগ করার পর এটি এর জনপ্রিয়তা হারায় । ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদে রাজধানী স্থানান্তর করা হয়েছিল ;এটিই ছিল প্রধান কারণ।রাজকীয় মুঘল আমল সমাপ্ত হওয়ার পর দুর্গটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়ে যায় । ১৮৪৪ সালে এলাকাটি "আওরঙ্গবাদ " নাম বদলে "লালবাগ" নাম পায় এবং দুর্গটি পরিণত হয় লালবাগ দুর্গে ।[৮]








দিওয়ান-ই-আমঃ দোতলা এই ভবনের নীচতলায় একটি হাম্মাম রয়েছে। হাম্মামের সাথে মাটির নীচে পানি গরম করার ব্যবস্থা রয়েছে। হাম্মামের পশ্চিমদিক একটি দেওয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।
পানির ট্যাংকঃ দিওান-ই-আমের পূর্বদিকে একটি বর্গক্ষেত্রাকার পানির ট্যাংক রয়েছে (যেটির প্রতিটি দিক ৭১.৬৩ মিটার দীর্ঘ। ট্যাংকের অভ্যন্তরে নামার জন্য এটির চারকোণায় চারটি সিঁড়ি রয়েছে।
পরীবিবির মাজারঃ শায়েস্তা খানের কন্যা পরীবিবির মাজারটি কেল্লার মধ্যবর্তী স্থানে একটি চারকোণা কক্ষে অবস্থিত। এই মাজারটি একটি অষ্টভুজ গম্বুজ এবং পিতলের আবরনে আবৃত করা আছে। মাজারের ভিতর দিকের দেয়াল সাদা মার্বেলে মোড়ানো। এই কক্ষটিকে ঘিরে আরও আটটি কক্ষ রয়েছে যেগুলোর মধ্যে দক্ষিন পূর্ব কোনায় অবস্থিত কক্ষটিতে একটি ছোট কবর রয়েছে।
লালবাগ কেল্লা মসজিদ: তিনগম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি একটি পানির ট্যাংকসহ পূর্বদিকে অবস্থিত।
এই কেল্লার সাথে একদিকে যেমন জড়িয়ে আছে মুঘল যুবরাজ মোহাম্মদ আজমের স্বপ্ন যেটি শেষ পর্যন্ত আর পুরন হয়নি অপরদিকে এই কেল্লার প্রতিটি ইটের সাথে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস এবং রহস্য। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা চলে, লালবাগ কেল্লা (আওরঙ্গবাদ কেল্লা) না দেখলে ঢাকায় আপনার আসা সার্থক হবে না।

টিকেট প্রাপ্তিস্থানঃ
লালবাগ কেল্লার দরজার ঠিক ডান পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার, জনপ্রতি টিকেট এর দাম বিশ টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়েনা। যেকোনো বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য দুইশত টাকা করে।
বন্ধ-খোলার সময়সূচীঃ
গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেল্লা খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে ১.৩০ পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যেই শুক্রবারে জুম্মার নামাযের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে তিনটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবিবার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা  ২.০০ থেকে  লালবাগ কেল্লা খোলা থাকে। এছাড়াও সরকারী কোন বিশেষ দিবসে লালবাগ কেল্লা থাকে ।
কিভাবে যাবেন
আজিমপুর বাসষ্ট্যান্ডে নেমে ১৫/২০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে লালবাগে  যাওয়া যায়। দর্শনাথী ইচ্ছা করলে পায়ে  হেঁটেও লালবাগে যেতে পারেন। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চটার্মিনাল থেকে বাবু বাজার হয়ে লালবাগে যাওয়া যায়।

0 comments:

Post a Comment