Thursday, September 21, 2017

বালিয়াটি প্রাসাদ বা বালিয়াটি জমিদার বাড়ি ঘুরাঘুরি,মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তরে সাটুরিয়া, দক্ষিণে হরিরামপুর, পশ্চিমে ঘিওর উপজেলা এবং পূর্বে ঢাকা জেলা অবস্থিত। ঢাকা বিভাগের একটা উল্লেখযোগ্য জেলার নাম মানিকগঞ্জ। মানিকগঞ্জে যে কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে তার মধ্যে বালিয়াটি প্রাসাদ অন্যতম। একদিন হুট করে আমার কয়জন বন্ধু সকাল ৮টায় আমাকে ফোন দিয়ে বলে মানিকগঞ্জের বালিহাটি প্রাসাদ যাব, তুই যাবি? আমরা মাথায় তখন এই এলো আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই কিন্তু কখনো যাওয়া হয়নি। সাথে সাথে রাজি হয়ে গেলাম। ওরা আমাকে গুলিস্তান যেতে বলল। আমি যতটুকু জানতাম ওখানে দুই ভাবে যাওয়া যায়। ঢাকার যেকোনো জায়গা থেকে গাবতলী এসে তারপর যাওয়া যায়। গাবতলী থেকে এসবি লিংক বাসে করে সরাসরি বালিয়াটি প্রাসাদ যাওয়া যায়। এসবি লিংক বাসে গাবতলী থেকে বালিয়াটি প্রাসাদ পর্যন্ত ভাড়া ৬৫ টাকা। তা ছাড়া গুলিস্তান থেকে সরাসরি বিআরটি বাস বা শুভযাত্রা বাসে ৮০ টাকা দিয়ে মানিকগঞ্জের আগের বাসস্ট্যান্ড কালাপুর নেমে ওখান থেকে সিএনজি ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে সরাসরি বালিয়াটি প্রাসাদ যাওয়া যায়। আমি তখন ওদের গাবতলী থেকে বালিয়াটি প্রাসাদ যাওয়ার কথা বলি। আমাদের সঙ্গে কয়েকজন মেয়ে ছিল। তারা আমার কথায় বাধা দিল। কিন্তু আমার বন্ধু আরিফ ও আমি ঠিক করলাম গাবতলী থেকে যাব। অন্যরা গুলিস্তান থেকে যাবে।
গাবতলি গিয়ে দেখলাম একটা এসবি লিংক বাস সরাসরি বালিহাটি প্রসাদ যাওয়া জন্য ডাকছে। আমরা উঠে গেলাম। আমি বাসে উঠে ইন্টারনেটে কিছু তথ্য ঘাটাঘটি শুরু করলাম। যা জানলাম তা হলো এই প্রাসাদ ঢাকা থেকে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে এবং মানিকগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় আট কিলোমিটার পূর্ব দিকে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বালিয়াটি প্রাসাদ স্থানীয়ভাবে যা বালিয়াটি জমিদারবাড়ি নামেই পরিচিত। বালিয়াটির জমিদাররা উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে আরম্ভ করে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বছর বহুকীর্তি রেখে গেছেন যা জেলার পুরাকীর্তিকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করেছে। পুরাকীর্তির ইতিহাসে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি এক অনন্য সৃষ্টি। খ্রিস্টীয় উনিশ শতকের দিকে এই বাড়ি নির্মিত হয়। একটি নিম্নবিত্ত সাহা পরিবার থেকেই বালিয়াটি জমিদার বংশের উদ্ভব। বালিয়াটির জমিদারদের পূর্বপুরুষ গোবিন্দ রায় সাহা ছিলেন একজন ধনাঢ্য লবণ ব্যবসায়ী। এই বাড়ির উত্তর-পশ্চিম অংশে লবণের একটা বড় গোলাবাড়ি ছিল। এই কারণে এই বাড়ির নাম রাখা হয়েছিল গোলাবাড়ি। সেকালে গোলাবাড়ির চত্বরে বারুনির মেলা বসত এবং এর পশ্চিম দিকে তাল পুকুরের ধারে আয়োজন করা হতো রথ উৎসব। এখানে বসত রথের মেলা। পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে বর্তমানে এই স্থানে রথের মেলা হয় না। এই রথ উৎসব এখনো হয় বালিয়াটি গ্রামের পুরান বাজারের কালী মন্দিরের পাশে। তাঁর বংশের উত্তরাধিকারদের কেউ একজন জমিদারি লাভ করেন। এরাই পরে এই বাড়ি নির্মাণ করেন— গোবিন্দ রায়ের পরবর্তী বংশধর দাধী রাম, পণ্ডিত রাম, আনন্দ রাম ও গোলাপ রাম। এই পরিবারে স্মরণীয় অন্য ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন— নিত্যানন্দ রায় চৌধুরী, বৃন্দাবন চন্দ্র, জগন্নাথ রায়, কানাই লাল, কিশোরি লাল, যশোর্ধ লাল, হীরা লাল রায় চৌধুরী, ঈশ্বর চন্দ্র রায় চৌধুরী, হরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী প্রমুখ। ঢাকার জগন্নাথ মহাবিদ্যালয় (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এদেরই বংশধর বাবু কিশোরীলাল রায়। আনুমানিক ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে বালিয়াটি জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। ১৩০০ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ এই বাড়ির জমিদাররা গৃহপ্রবেশ করেন বলে জানা যায়। এই জমিদার বাড়ি ৫.৮৮ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। জমিদার বাড়ির সামনেই রয়েছে একটি বড় পুকুর। বাড়িটির সম্মুখভাগে চারটি সুবিন্যস্ত সিংহদ্বার সমৃদ্ধ চারটি বিশাল প্রাসাদ পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত এমন সুদৃশ্যভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বর্তমানে এই পুকুরের ঘাটগুলো জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এখানে সাতটি প্রাসাদতুল্য ইমারতে মোট ২০০টি কক্ষ আছে।
এখানে পরিদর্শের টিকিটের হার দেশি দর্শনার্থী- ২০ টাকা, সার্কভুক্ত দর্শনার্থী-১০০ টাকা,   বিদেশি দর্শনার্থী- ২০০ টাকা। 






















বন্ধ : রবিবার পূর্ণদিবস ও সোমবার অর্ধদিবসসহ সরকারি ছুটির দিন। ঈদের পরের দিন এই প্রাসাদ বন্ধ থাকে।

অন্দর মহলের বাইরের কারুকাজ দেখে ৪ নম্বর প্রাসাদের সামনে এলাম। বালিয়াটিতে ১৯২৩ সালের দিকে জমিদার কিশোরী রায় চৌধুরী নিজ ব্যয়ে একটি এলোপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন করেন। বর্তমানে এটি সরকারি নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে। জমিদার হীরালাল রায় চৌধুরী সাটুরিয়া থেকে বালিয়াটির প্রবেশ পথের পাশে কাউন্নারা গ্রামে একটি বাগানবাড়ী নির্মাণ করেন এবং সেখানে দীঘির মাঝখানে একটি প্রমোদ ভবন গড়ে তোলেন যেখানে সুন্দরী নর্তকী বা প্রমোদ বালাদের নাচগান ও পান চলত। বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর দৃষ্টিনন্দন ও প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণ করছে। আমাদের ঘুরতে ঘুরতে ৫টা বেজে গেল। আমরা আবার এসবি লিংক বাসে করে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করলাম। কেউ যদি একদিনের জন্য ঢাকার আশপাশে ঘুরতে চান তাহলে বালিয়াটি জমিদারবাড়ি ঘুরে আসতে পারেন। সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন খাবার-দাবার। অবশ্য রাজবাড়ির আশপাশে হোটেলও আছে। তবে ভ্রমণে নিজের সঙ্গে খাওয়ার পানি রাখতে ভুলবেন না। 

0 comments:

Post a Comment