Thursday, September 21, 2017

মিনি কক্সবাজার মুছাপুর ক্লোজার ঘুরাঘুরি,জেলা: ফেনী











বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে ছোট ফেনী নদীর ওপর গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের আরেক ‘মিনি কক্সবাজার’ কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ক্লোজার। প্রতিদিন মাইক্রো, সিএনজি টেক্সি, পিকআপ ভ্যানে করে ঢোল, তবলা, সাউন্ডবক্স নিয়ে আনন্দ-উল্লাসে ছুটে যাচ্ছে বিনোদন-প্রেমীরা। আসাম-ভোলা-আলেকজান্ডার-সোনাপুর ও কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর হয়ে জোরালগঞ্জ ও কর্ণফুলীর টানেল কক্সবাজারের সঙ্গে সংযোগ সড়কটির কাজ দ্রুত এগিয়ে চলায় ক্লোজারের ওপর পর্যটন এরিয়া গড়ে উঠেছে। ঈদের আনন্দকে বাড়িয়ে নিতে হাজারো প্রাণের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে নোয়াখালীর অঘোষিত পর্যটন স্পট কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর ক্লোজার ঘাট। অনেকে এ স্পটটিকে ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসেবেই চেনেন। ঈদুল আজহার চতুর্থ দিন বিকালে গিয়ে দেখা যায়, ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগী করে নিতে কেউ সপরিবারে কেউবা আবার বন্ধুদের নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছেন। জোয়ারভাটা, নদীর নৈসর্গিক দৃশ্য, মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, জেলেদের মৎস্য উৎসব দেখতেই হাজার হাজার দর্শনার্থী প্রতিদিনই এখানে ভিড় জমাচ্ছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মুছাপুরে ঈদের পর থেকে দৈনিক ৫০ হাজার থেকে ১ লাখেরও বেশি পর্যটক আসেন। নোয়াখালী ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকেও অনেক ভ্রমণপিপাসু আসছেন। ঈদ ছাড়াও ছুটির দিনগুলোতে অনেক পর্যটক এখানে বেড়াতে আসেন। সমুদ্র সৈকত এবং বনের মিশেলে ক্লোজারের সৌন্দর্য অনেকটাই বেড়ে গেছে। নোয়াখালীর সদর থেকে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন ফাহিমা বেগম। তিনি তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেক ভাল লাগছে খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসে পরিবারের সবাইকে নিয়ে সমদ্র উপভোগ করতে পারলাম।’ তবে ক্লোজার ঘাটের আশপাশের কোথাও ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা ফেলা হচ্ছে। সৈকতের পরিবেশ দূষিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন ঘুরতে আসা চবির মেরিন সায়েন্সের শিক্ষার্থী অনিক। পর্যটকদের কেউ কেউ আবার রাস্তার সংকীর্ণতার কারণে যানজটের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও জানান। গাড়ি পার্কিংয়ের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় গাড়ির নিরাপত্তার স্বার্থে ক্লোজার ঘাটের উপর দিয়ে সবাই গাড়ি চালান। এ কারণে দুঘর্টনাও ঘটে। একথা জানান ক্লোজার সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। বেশিদিন আগের কথা নয়, গেল বছর এখানে নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। ভাঙনকবলিত মানুষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে করা হয় ক্লোজার। এ স্পটকে ঘিরে পাল্টে যাচ্ছে সেখানকার মানুষের জীবন। আশপাশের জেলা থেকে প্রতিদিন আসছে হাজার হাজার দর্শনার্থী। এবারের ঈদের ছুটিতে ভ্রমণপিপাসু প্রায় এক লাখ লোকের সমাবেশ হয়েছে সেখানে। প্রথম দেখাতে মনে হবে সৈকত। খানিক পরে ভ্রম কাটবে। খুঁজে পাবেন নদীপাড়ে সাগরের আবহ। অনেকেই আবার এ ক্লোজারের নাম দিয়েছেন ‘মিনি কক্সবাজার’। আর সেই কারণেই প্রতিদিন ফেনী, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর থেকে হাজার হাজার পর্যটক ভিড় জমান এখানে। খবর পেয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও ছুটে আসছেন অনেকেই। তবে, সমস্যা হচ্ছে নিরাপত্তা ও যাতায়াতের। এ কারণে অনেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন এ পর্যটনের অপার সম্ভাবনাময় স্পট থেকে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জের মুছাপুর নদীর তীরে সরকারের প্রায় ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এই মুছাপুর ক্লোজার। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, এখানে আছে নদীর প্রাকৃতিক দৃশ্য, নৌকা ভ্রমণের অসাধারণ আনন্দ-অভিজ্ঞতা, সকালের শান্ত মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ, রাখালের গান, মাঝির গান, পাখির কলতান, জেলেদের মৎস্য উৎসব, গরু-মহিষ-ভেড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির পশু-পাখিদের সৌন্দর্য ও বিকালের হিমেল হাওয়াসহ নানা গ্রাম্য ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক দৃশ্য।
যেভাবে যাওয়া যায়: নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট থেকে বাংলাবাজার। সেখান থেকে চৌধুরীবাজার পার হয়ে ২ কিলোমিটার রাস্তা হয়ে চার রাস্তার মোড় দিয়ে পূর্বদিকে জনতা বাজার, এরপর দক্ষিণে ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে একটু পূর্বে গেলেই মুছাপুর ক্লোজার। তবে, সেখানে এখনও নিরাপত্তার তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায়, দর্শনার্থীদের দিনে দিনেই ফিরে আসতে হয়।

0 comments:

Post a Comment