Thursday, September 21, 2017

করমজল,সুন্দরবন ঘুরাঘুরি,জেলা:বাগেরহাট

সুন্দরবনের পূর্ব বনবিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের অধীনে করমজল পর্যটন কেন্দ্র। নদী পথে খুলনা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার এবং মংলা থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে এ পর্যটন কেন্দ্রটির অবস্থান।

একটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র ছাড়াও এখানে আছে হরিণ ও কুমির প্রজনন ও লালন পালন কেন্দ্র।  এটি।
মংলা থেকে ইঞ্জিন নৌকায় চড়লে করমজলের জেটিতে পৌঁছা যাবে এক থেকে দেড় ঘণ্টায়। পর্যটন কেন্দ্রটির শুরুতেই বিশাল আকৃতির মানচিত্র সুন্দরবন সম্পর্কে সাম্যক ধারণা দেবে। মানচিত্র পেছনে ফেলে বনের মধ্যে দক্ষিণে চলে গেছে আঁকাবাঁকা কাঠের তৈরি হাঁটা পথ। পথের নাম মাঙ্কি ট্রেইল।






এই নামের স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায় ট্রেইলে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই। পুরো ট্রেইল জুড়েই দেখা মিলবে সুন্দরবনের অন্যতম বাসিন্দা রেসাস বানরের।
পথের দুই ধারে ঘন জঙ্গল। এ বনে বাইন গাছের সংখ্যা বেশি। কাঠের পথ কিছু দূর যাওয়ার পরে হাতের বাঁয়ে শাখা পথ গিয়ে থেমেছে পশুরের তীরে। শেষ মাথায় নদীর তীরে বেঞ্চ পাতানো ছাউনি।
মূল পথটি আরও প্রায় আধা কিলোমিটার দক্ষিণে গিয়ে ছোট খালের পাড়ে থেমেছে। পথের মাথায় এখানেও আরও একটি শেইড। সেখান থেকে আবারও পশ্চিম দিকে কাঠের ট্রেইলটি চলে গেছে কুমির প্রজনন কেন্দ্রের পাশে। এই ট্রেইলের মাঝামাঝি জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে একটি পর্যবেক্ষণ বুরুজ। এর চূড়ায় উঠলে করমজলের চারপাশটা ভালো করে দেখা যায়।
কাঠের তৈরি ট্রেইলের  একেবারে শেষ প্রান্তে কুমির প্রজনন কেন্দ্র। সেখান থেকে সামান্য পশ্চিম দিকে হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র। সামনেই ছোট ছোট অনেকগুলো চৌবাচ্চা। কোনটিতে ডিম ফুটে বের হওয়া কুমির ছানা, কোনটিতে মাঝারি আকৃতির আবার কোনটিতে আরও একটু বড় বয়সের লোনা জলের কুমিরের বাচ্চা।
একেবারে দক্ষিণ পাশে দেয়াল ঘেরা বড় পুকুরে আছে রোমিও, জুলিয়েট আর পিলপিল। জেলেদের জালে ধরা পড়া এই তিন লোনা পানির কুমিরকে ২০০২ সালে সুন্দরবনের করমজলে আনা হয়। রোমিও-জুলিয়েটের বয়স এখন ২৩। এই জুটি প্রজননক্ষম হয় ২০০৫ সালে।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম উপায়ে কুমির উৎপাদনে মূল অবদান তাদেরই। জুলিয়েট আকারে রোমিওর চেয়ে সামান্য ছোট। লোনা পানির এই প্রজাতির কুমির আশি থেকে একশো বছর বাঁচে।


জুলিয়েট এ পর্যন্ত ডিম দিয়েছে মোট ৪৮২টি। সেখান থেকে ২৮৪টি বাচ্চা ফুটিয়েছেন বন্য প্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের কর্মীরা। করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন ও সংরক্ষণ কেন্দ্রের আরেক নারী সদস্য পিলপিল। এখন পর্যন্ত সে ডিম দিয়েছে ৪৪টি, যা থেকে বাচ্চা ফুটেছে ৩৩টি।
এর পাশেই চোখে পড়বে চিড়িয়াখানার মতো খাচায় ঘেরা খোলা জায়গা। ভেতরে চিত্রা হরিণ। খাঁচার ভেতরে পশ্চিম কোণে ছোট আরেকটি খাঁচা। ভেতরে রয়েছে কয়েকটি রেসাস বানর।
কীভাবে যাবেন
ঢাকার সায়দাবাদ বাস স্টেশন থেকে সরাসরি মংলা যায় সুন্দরবন ও পর্যটক সার্ভিসের বাস। ভাড়া ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা। মংলা থেকে ইঞ্জিন নৌকায় চড়ে যেতে হবে করমজল। দশ জনের উপযোগী একটি ইঞ্জিন নৌকার যাওয়া আসার ভাড়া ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২শ’ টাকা। এসব ইঞ্জিন নৌকাগুলো সাধারণত ছাড়ে মংলা ফেরি ঘাট থেকে।























কোথায় থাকবেন

সারাদিন করমজলে বেড়িয়ে রাতে এসে থাকতে পারেন বন্দর শহর মংলায়। এখানে আছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল পশুর (০৪৬৬২-৭৫১০০)। নন এসি ডবল রুমের ভাড়া ১ হাজার ২শ’ টাকা এবং এসি ডবল রুম ২ হাজার টাকা।

ইকনোমি বেড ৬শ’ টাকা। এছাড়াও মংলা শহরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। এসব হোটেলে ১শ’ থেকে ৬শ’ টাকায় কক্ষ পাওয়া যাবে।
প্রয়োজনীয় তথ্য
করমজলে দেশি পর্যটকের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা, বিদেশী পর্যটক ৩শ’ টাকা। দেশি ছাত্র ২০ টাকা। দেশি গবেষক ৪০ টাকা। বিদেশী গবেষক জনপ্রতি ৫শ’ টাকা। অপ্রাপ্ত বয়স্ক (বারো বছরের নিচে) দশ টাকা। দেশি পর্যটকের ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহারে ক্যামেরা প্রতি ২শ’ টাকা। বিদেশি পর্যটক ৩শ’ টাকা। উপরের সব মূল্যের সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য।
করমজল যেতে হয় পশুর নদী পাড়ি দিয়ে। এই নদী সবসময়ই কম-বেশি উত্তাল থাকে। তাই ভালো মানের ইঞ্জিন নৌকা নিয়ে যাওয়া উচিৎ। আগেই নিশ্চিত হয়ে নিন নৌকায় পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও লাইফ বয়া আছে কী না।
বন রক্ষী ছাড়া জঙ্গলের ভেতরে ঢুকবেন না। হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের কোন প্রাণীকে খাবার দিবেন না।

0 comments:

Post a Comment